শুক্রবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

আজ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দশম মৃত্যুবার্ষিকী

ছবি: সংগৃহীত -- চিত্রজগত.কম

দশ বছর আগে আজকের দিনে বাঙালিকে শূন্য করে চিরকালের জন্য বিদায় নিয়েছিলেন সাহিত্যিক-কবি সুনীল গাঙ্গুলি। আজ রবিবার (২৩ অক্টোবর) সুনীল গাঙ্গুলির প্রয়াণ দিবস। ২০১২ সালে, আজকের দিনেই বিখ্যাত এই সাহিত্যিক হৃদযন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে প্রয়াত হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

মহান সাহিত্যিক-কবি সুনীল গাঙ্গুলির সপ্তম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে স্মরণ করি। ‘প্রথম আলো’, ‘সেই সময়’ থেকে ‘পূর্ব পশ্চিম’-একের পর এক গল্প-উপন্যাস লিখে বাঙালির হৃদয়ে চিরকালীন স্থান পেয়েছেন সুনীল গাঙ্গুলি। ‘নীললোহিত’ থেকে ‘কাকাবাবু’, ‘সেই সময়’ থেকে ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’, তিনি তাঁর একের পর নিজস্ব ধারার লেখার মাধ্যমে তিনি সাহিত্যের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছিলেন।

১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মদারিপুরে কালকিনি উপজেলার মাইজপাড়া গ্রামে। জন্ম বাংলাদেশে হলেও, মাত্র চার বছর বয়সে কলকাতা চলে যান। পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তখনকার সময় ব্যাংকের পিয়নের চেয়েও স্কুল মাস্টারের বেতন ছিল কম। সুনীলের মা কখনোই চাননি ছেলে শিক্ষকতা করুক। পড়াশুনা শেষ করে কিছুদিন তিনি অফিসে চাকরি করেন। এরপর থেকে সাংবাদিকতায়।

আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মি. পলেন কলকাতায় এলে সুনীলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়। সেই সূত্রে মার্কিন মুলুকে গেলেন সুনীল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে। ডিগ্রি হয়ে গেলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রন্থাগারিক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন সুনীল।

সুনীলের পিতা তাকে টেনিসনের একটা কাব্যগ্রন্থ দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিদিন এখান থেকে দুটি করে কবিতা অনুবাদ করবে। এটা করা হয়েছিল এজন্য যে, তিনি যেন দুপুরে বাইরে যেতে না পারেন। তিনি তা-ই করতেন। বন্ধুরা যখন সিনেমা দেখত, সুনীল তখন পিতৃ-আজ্ঞা শিরোধার্য করে দুপুরে কবিতা অনুবাদ করতেন। অনুবাদ একঘেয়ে হয়ে উঠলে তিনি নিজেই লিখতে শুরু করেন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম নীললোহিত। নীললোহিতের মাধ্যমে সুনীল নিজের একটি পৃথক সত্তা তৈরি করতে সক্ষম হযন। নীললোহিতের সব কাহিনিতেই নীললোহিতই কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে নিজেই কাহিনিটি বলে চলে আত্মকথার ভঙ্গিতে। সব কাহিনিতেই নীললোহিতের বয়স সাতাশ। সাতাশের বেশি তার বয়স বাড়ে না। বিভিন্ন কাহিনিতে দেখা যায়, নীললোহিত চিরবেকার। চাকরিতে ঢুকলেও সে বেশিদিন টেকে না।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের কাহিনি চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অরণ্যের দিনরাত্রি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কাকাবাবু চরিত্রের চারটি কাহিনি সবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন?, মিশর রহস্য এবং ইয়েতি অভিযান চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। হঠাৎ নীরার জন্য তার চিত্রনাট্যে নির্মিত আরেকটি ছবি।

২০০২ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা শহরের শেরিফ নির্বাচিত হন। ১৯৭২ ও ১৯৮৯ সালে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত তিনি হন।

তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো- ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভু’, ‘শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা’, ‘অর্ধেক জীবন’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘অর্জুন’, ‘প্রথম আলো’, ‘সেই সময়’, ‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘ভানু ও রাণু’, ‘মনের মানুষ’ ইত্যাদি জনপ্রিয় গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি তার লেখা জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ “কাকাবাবু-সন্তু”।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘নীললোহিত’ এর পাশাপশি ‘সনাতন পাঠক’ ও ‘নীল উপাধ্যায়’ ছদ্মনামেও লিখতেন।

সংবাদচিত্র ডটকম/স্মরনীয় বরনীয়

সংশ্লিষ্ট সংবাদ