মঙ্গলবার, ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপক

শফিউজ্জামান খান লোদী’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপক শফিউজ্জামান খান লোদী’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৬ বছর। প্রয়াত শফিউজ্জামান খান লোদী’র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

শফিউজ্জামান খান লোদী (আবুল মকসুদ শফিউজ্জামান খান লোদী) ১৯৫৪ সালের ২১ নভেম্বর, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের বিখ্যাত লোদী বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষ ইব্রাহিম লোদী ছিলেন ‘লোদী রাজবংশে’র শেষ সুলতান। তাঁর বাবা সামসুজজোহা খান লোদী ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর (ব্রিটিশ ভারত), মা প্রয়াত সৈয়দা খানম লোদী। সাত ভাই-বোনের মধ্যে শফিউজ্জামান খান লোদী ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ। তিনি লেখাপড়া করেছেন, ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ছাত্রজীবন থেকেই পত্র-পত্রিকায় লেখা-লেখি শুরু করেন শফিউজ্জামান খান লোদী। যারমধ্যে বেশীরভাগই ছিল চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখা। সত্তর দশকে তিনি জড়িত হন চলচ্চিত্রসংসদ আন্দোলনের সাথে। এক সময় ‘চিত্রালী পাঠক-পাঠিকা চলচ্চিত্রসংসদ (চিপাচস)-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ছিলেন ‘চিপাচস’-এর উপদেষ্টা।
তাঁর বৈচিত্র্যময় জীবনের বেশ একটা সময় কেটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু, মাটির টানে তিনি ফিরে আসেন এবং হয়ে ওঠেন এক বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী।

তরুন বয়সে শিক্ষাজীবন চলাকালীন শুরু করেন বেতার ও টেলিফোনে শিক্ষামূলক ও সুস্থ সংস্কৃতির কাজ। দীর্ঘ দিন তিনি বাংলাদেশ বেতার-এ বিনোদজগতের তারকাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন। অধ্যাপক আবদুল্লা আবু সায়ীদ-এর পরিচালানা ও উপস্থানায়, সত্তর দশকের আলোচিত ও জনপ্রিয় বিটিভির শিক্ষা ও বিনোদন মূলক অনুষ্ঠান ‘হারজিৎ’, ‘সপ্তবর্না’ ও ‘মানচিত্র’ নামের অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন শফিউজ্জামান খান লোদী। এসব অনুষ্ঠানগুলোতে ঢেলে দিয়েছেন তাঁর পূর্ণ মেধা ও শ্রম । সত্তুরেরদশকে বিটিভির বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ‘সপ্তবর্না’র জনপ্রিয়তা ছিল আকশচুম্বী।

যে টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দেশের মানুষের কাছে সর্বাধিক পরিচিতি পেয়েছেন, সে অনুষ্ঠানের নাম ‘আমার ছবি’। চলচ্চিত্রবিষয়ক এই জনপ্রিয় সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানের তিনি ছিলেন উপস্থাপক। এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনার কাজও করেছেন। চ্যানেল আই’য়ে প্রচারিত ‘আমার ছবি’ অনুষ্ঠানটি দীর্ঘ আঠার বছর তিনি সফলতার সাথে উপস্থাপনা করে গেছেন।
এছাড়াও এটিএন বাংলা ও ইটিভি’সহ কয়েকটি চ্যানেল-এ তাঁর পরিচালিত বেশ কিছু অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে। তিনি, বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে বেশকিছু প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন।

শফিউজ্জামান খান লোদী তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৮১ সালে, Universal & Popular Advertising Ltd. এর মাধ্যমে। এরপর তিনি আরো কাজ করেন আমাদের দেশের প্রথম সাড়ির এ্যাড এজেন্সি Adcoom Ltd. ও Unitrend McCann. এ। ২০০৮ সালে Unitrend McCann. থেকে COO হিসেবে অবসর নেন। এবং নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন One Step Ahead নামে এ্যাড এজেন্সি। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শফিউজ্জামান খান লোদী বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন। তিনি ‘বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। আরো যেসব সংগঠনের সদস্য ছিলেন- নিরাপদ সড়ক চাই, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বাংলাদেশ ক্যান্সার ওয়ারিয়র্স (একটি সোস্যাল মিডিয়া প্রজেক্ট), ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশান, ঢাকা ইউনিভার্সিটি পাবলিক এডমিনিসট্রেশান এলামনাই এসোসিয়েশান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব, উত্তরা ক্লাব অন্যতম।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন- বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, বিসিআরএ এ্যাওয়ার্ড, ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কারসহ আরো অনেক সম্মাননা।

ব্যক্তিজীবনে শফিউজ্জামান খান লোদী, সিরিয়া খান লোদী (কবি মনি লোদী)র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সুমাইয়া এস খান লোদী, সিফাত এস খান লোদী (কানাডা প্রবাসী) ও সোয়েরা সানাম খান লোদী (অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী) নামে তাদের তিন সন্তান এবং দুই নাতি রয়েছে।

টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপক-নির্মাতা, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, চলচ্চিত্রসংসদকর্মী ও সাংবাদিক শফিউজ্জামান খান লোদী। ছিলেন টেলিভিশনের অতি প্রিয় মুখ। হাস্যজ্জোল প্রাণখোলা এক সাদা মনের মানুষ। তাঁর হাসিমাখা হৃদয়-ছোঁয়া কণ্ঠস্বরই তাঁকে জনপ্রিয় উপস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি, বিশেষ করে চলচ্চিত্রের প্রতি ছিল তাঁর সুতীব্র ভালোবাসা। দীর্ঘ আঠার বছরধরে চ্যানেল আই’য়ে প্রচারিত চলচ্চিত্রবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘আমার ছবি’ সাফল্যের সাথে নির্দেশনা ও উপস্থাপনা করে গেছেন পরম মমতায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের বিশাল এক আর্কাইভও তিনি গড়ে তোলেন।

তাঁর ব্যক্তিত্বের বড় দিক ছিল ‘বিনয়’। তাঁর ‘বিনীত থাকার সংস্কৃতি’ ছিল চোখে পরার মত। ছোট-বড় সবার প্রতি তাঁর বিনয় ও ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। সব ধরণের মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এক অদ্ভূত গুন ছিল তাঁর। এসব কারণে তিনিও ছিলেন সবার প্রিয় ও ভালোবাসার মানুষ। বিশেষকরে টেলিভিশন, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ও সাংবাদিক এনং অসংখ্য বন্ধুদের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং অনেকের প্রিয় লোদী ভাই। অনন্তলোকে ভালো থাকুন আমাদের সবার প্রিয় লোদী ভাই- এই প্রার্থণা করি।

চিত্রজগত/মুক্তমত

সংশ্লিষ্ট সংবাদ