বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের অধিকার

গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস ভাড়া নির্ধারণের দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চলছে। পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘাত বাড়ছে। দিন দিন এই সংঘাত চরমে উঠছে। বাস ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে শিক্ষার্থীদের হেনস্তা থেকে শুরু করে মারধরের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।

হাফ পাসের আন্দোলন নতুন নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় এটা কার্যকরও ছিল। এটা অনানুষ্ঠানিকতার মধ্যে চলছিল। ঢাকা শহরে গত ৮-১০ বছরে গণপরিবহনে হাফ পাস তুলে দেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে মনোযোগী হয়ে সমাধান দিতে হবে। আইনগত ভিত্তি না থাকলেও হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের অধিকার। পাকিস্তান শাসনামলে আন্দোলন করেই সেই অধিকার আদায় করেছে শিক্ষার্থীরা।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ‘১১ দফা’ নামে শিক্ষার্থীদের যে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা যায়, সেখানেও হাফ ভাড়ার বিষয়টি উল্লেখ ছিল। ১১ দফার ১-এর (ঢ) অনুচ্ছেদে আমরা দেখতে পাই, “ট্রেনে, স্টিমারে ও লঞ্চে ছাত্রদের ‘আইডেন্টিটি কার্ড’ দেখাইয়া শতকরা ৫০ ভাগ ‘কন্সেশনে’ টিকেট দেয়ার ব্যবস্থা করিতে হইবে। মাসিক টিকেটেও ‘কন্সেশন’ দিতে হইবে। পশ্চিম পাকিস্তানের মতো বাসে ১০ পয়সা ভাড়ায় শহরের যে কোনো স্থানে যাতায়াতের ব্যবস্থা করিতে হইবে। দূরবর্তী অঞ্চলে বাস যাতায়াতেও শতকরা ৫০ ভাগ ‘কন্সেশন’ দিতে হইবে। ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করিতে হইবে।”

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে বাসের ভাড়া বাড়তে থাকে এবং চালু হয় সিটিং সার্ভিস। সিটিং সার্ভিস বাসগুলোই প্রথম বড় বড় অক্ষরে ‘হাফ পাস নেই’ লিখে ছাত্রভাড়া অর্ধেক নেয়ার নিয়ম বন্ধ করে দেয়। তবে বিভিন্ন সময় ছাত্র বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ফলে অনেক রুটে হাফ ভাড়া নেয়ার প্রচলন এখনো আছে। সেক্ষেত্রে ওয়েবিল স্বাক্ষরের সময়ই ছাত্রদের হাত তুলতে বলা হয়। তখন তাদের সংখ্যাও ওয়েবিলে লিখে দেয়া হয়।

গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ায় শিক্ষাঙ্গনে যাতায়াতের সুবিধা পাওয়াটা ন্যায্য বিষয়। শুধু ছাত্ররাই নয়, সিনিয়র সিটিজেনসহ প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদেরও গণপরিবহনে বিশেষ সুযোগ দিয়ে থাকে উন্নত দেশগুলো। বাংলাদেশেও সবসময় এই বিশেষ সুযোগটি সাধারণ নিয়ম হিসেবেই গুরুত্ব পেয়ে আসছে। নতুন করে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হাফ পাসের বিষয়টি সামনে আসছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে, ডিজেলের দাম বৃদ্বিতে হাফ পাস নেয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে নতুন কোনো নির্দেশনাও তারা পায়নি।

তাদের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। নতুন করে নির্দেশনার প্রয়োজন কেন। হাফ পাসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পূর্ব নির্ধারিত। এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও হট্টগোল লেগেই আছে। সংঘবদ্ধ এই চক্রকে প্রতিহত করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থেই অবিলম্বে এই অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। কেবল সরকারের সতর্কতাই যথেষ্ট নয়, বরং আমরা মনে করি, বাস মালিক সমিতিসহ চালক, যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের সবারই সচেতন হওয়া জরুরি।

চিত্রজগত/সম্পাদকীয়

সংশ্লিষ্ট সংবাদ