শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাবার পাশে শায়িত হলেন ফারুক

সংগৃহীত ছবি -- চিত্রজগত.কম

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাত ৯টায় কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম গ্রামে বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠানকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।

একটা সময়ে পর্দায় তার উপস্থিতি মানে ছিলো ভক্তদের উল্লাস। রাজনীতির মাঠে উপস্থিতি মানে ছিলো কর্মীদের উৎসাহ। সেইসব ভক্ত থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মী-বলা যায় সব শ্রেনী পেশার মানুষের কাছে কাল তার উপস্থিতি ছিলো একরাশ বেদনার পাহাড়ের মত। জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গন পুরোটাই হলে উঠেছিল যেন একটা শোকবই। যাকে ঘিরে এই নীরবতা, তিনিও উপস্থিত ছিলেন যথারীতি। তবে নিথর দেহ নিয়ে।

গত সোমবার পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে তার লাশ আসে মঙ্গলবার সকালে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে সব শ্রেনী, পেশার মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয় সকাল সাড়ে ১১ টার পরে। সেখানেই হাজির হন দেশের মন্ত্রী, সহকর্মী ও ভক্তরা।

এ সময় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়াও ফারুককে শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাট্যদল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বিশিষ্ট রাজনীতিক, সিনেমার তারকা ছাড়াও ভিড় করেন অগণিত সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ভক্তদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদকে এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শ্রদ্ধা জানানো শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিশ্বাসে, আচরণে, কর্মকাণ্ডে অভিনেতা ফারুক একচুলও তার আদর্শ থেকে নড়েননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে গেছেন। আদর্শের প্রশ্নে তিনি ছিলেন অবিচল, পাহাড়ের মতো অটল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পুরস্কৃত করেছেন, জাতীয় সংসদে গুলশান আসনে মনোনয়নদানের মাধ্যমে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তিনি এলাকাবাসীর জন্য কিছু করার সময় পাননি। অনেক দিন তিনি সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে কোমায় ছিলেন। কিছু দিন আগে তার গলার স্বর টেলিফোনে শুনতে পেলাম। আমরা ভেবেছি তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি ফিরে এসেছেন, মরদেহ হয়ে। তার থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে আদর্শের প্রশ্নে তিনি নানা সংকটেও দিশেহারা হননি।’

নায়ক ফারুকের পুত্র রওশন হোসেন পাঠান শরৎ বলেন, ‘আপনারা আমার বাবাকে শেষবারের মতো সম্মান জানাতে এসেছেন। এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকেন, তাকে মাফ করে দেবেন। দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন।’

শহীদ মিনারে ফারুকের মরদেহ রাখা হয় দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত। এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে এই শ্রদ্ধা পর্ব শেষ হয়। এরপর নিথর ফারুককে নেয়া হয় তার প্রাণের কর্মস্থল এফডিসিতে। ফারুককে শেষবারের মত শ্রদ্ধা জানাতে এফডিসিতে এসেছিলেন তার সহকর্মীসহ নবীন প্রবীণ চলচ্চিত্রকর্মীরা। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন আলমগীর, সুজতা, রোজিনা, নাঈম, রিয়াজ, ওমর সানী, মিশা সওদাগর, ফেরদৌস, নিপুণ, জায়েদ খান, সুব্রত, অরুণা বিশ্বাস, কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, এস ডি রুবেল, চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াত, মহাসচিব শাহীন সুমন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তারসহ অনেকেই।

শ্রদ্ধা জানাতে এসে নায়ক ফারুককে নিয়ে অভিনেত্রী সুজাতা বলেছেন, ‘তিনি বেশ সাহসী মানুষ ছিলেন। সত্যকে কখনও অস্বীকার করেনি। যতই তিক্ত হোক, সে সত্যটা তুলে ধরেছেন সবসময়। ফারুক আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে।’

এফডিসিতে শ্রদ্ধা ও জানাজা শেষে ফারুকের মরদেহ নেওয়া হয় চ্যানেল আই এর প্রাঙ্গণে। সেখানে চলচ্চিত্র অভিনেতা শাকিব খানসহ অনেকেই শ্রদ্ধা জানান। সেখানে জানাজা শেষে নেওয়া হয়েছে গুলশানের আজাদ মসজিদে। অভিনেতার নির্বাচনী এই এলাকায় বাদ আসর আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গাজীপুরের কালীগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে ফারুককে দাফন করা হয়।

চিত্রজগত ডটকম/বিশেষ সংবাদ

সংশ্লিষ্ট সংবাদ