শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পদ্মশ্রী পদকপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার তরুণ মজুমদার আর নেই

চলচ্চিত্রকার তরুন মজুমদার -- চিত্রজগত.কম

টলিউডের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তরুণ মজুমদার আর নেই। আজ সোমবার স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টার পরে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এই নির্মাতা।

গত ১৪ জুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে কলকাতার পিজি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে রাখা হয় হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর তাঁকে আনা হয় কেবিনে। কিন্তু গত শনিবার রাত থেকে আবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শুরু হয় তাঁর শ্বাসকস্ট। গতকাল রোববার দুপুরে তাঁকে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে।

মৃত্যুকালে তরুণ মজুমদারের বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। চিকিৎসকরা বলেছেন, মাল্টি অরগান ফেলইউর হওয়ার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। গতকালও অবশ্য তাঁর ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। যদিও তাঁর সুচিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালে গড়া হয়েছিল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড।

চিকিৎসকরা এতদিন দফায় দফায় তাঁকে পর্যবেক্ষণ করছেন। তার কিডনি, হার্টসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রকট সমস্যা ছিল। ছিল তাঁর অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ।

ষাট থেকে আশির দশকে তরুণ মজুমদার বাংলা চলচ্চিত্র জগতে বেশ কয়টি বিখ্যাত ছবি নির্মাণ করেন। অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

তরুণ মজুমদারের জন্ম বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়, ১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি। প্রথম উত্তম-সূচিত্রা জমানায় ছবি নির্মাণে নেমেছিলেন তরুণ মজুমদার। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি হলো ‘চাওয়া পাওয়া’। ১৯৫৯ সালে উত্তম-সূচিত্রা এবং তুলসী চক্রবর্তীকে নিয়ে তৈরি করেছিলেন ছবিটি। এরপর তিনি একের পর এক ছবি বানান। ছবি বানিয়েছেন ৩৬টি। সর্বশেষ ছবি ২০১৮ সালের ‘ভালোবাসার বাড়ি’। ওই বছরই অবশ্য শেষ তথ্যচিত্র করেছিলেন তিনি। তথ্যচিত্রটি হলো ‘অধিকার’।

তরুণ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘গণদেবতা’, ‘কাঁচের স্বর্গ’, ‘যদি জানতেম’, ‘পলাতক’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘শহর থেকে দূরে’, ‘মেঘমুক্তি’, ‘খেলার পুতুল’, ‘অমর গীতি’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’, ‘পথভোলা’, ‘আগমন’, ‘আলোর পিপাসা’, ‘একটুকু বাসা’, ‘বালিকা বধূ’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘কুহেলি’, ‘শ্রীমান পৃথ্বিরাজ’, ‘ঠগিনি’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘পরশমণি’, ‘আপন আমার আপন’, ‘সজনী গো সজনী’, ‘কথাছিল’, ‘আলো’, ‘ভালোবাসার অনেক নাম’, ‘চাঁদের বাড়ি’, ‘ভালোবাসার বাড়ি’ উল্লেখযোগ্য।
তরুণ মজুমদার তাঁর ২০টি চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে এবং ৮টি চলচ্চিত্রে তাপস পালকে নিয়েছিলেন।

তরুণ মজুমদার চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সাতবার বিএফজেএ পুরস্কার, পাঁচবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ আনন্দলোক পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া তিনি ১৯৯০ সালে পেয়েছিলেন ভারতের সর্বেচ্চ রাষ্ট্রীয় সন্মান পদ্মশ্রী।

তরুণ মজুমদারের ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার, সূচিত্রা সেন, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল, তুলসী চক্রবর্তী, বসন্ত চৌধুরী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, চিন্ময় রায়, জহর রায়, সুপ্রিয়া চৌধুরী, শমিত ভঞ্জ, মাধবী মুখার্জি, অসিত বরণ, দিলীপ মুখার্জি, অনিল চ্যাটার্জি, রুমা গুহঠাকুরতা, মৌসুমী চ্যাটার্জি, বিশ্বজিৎ ব্যানার্জি, দেবশ্রী রায় , মহুয়া রায় চৌধুরী, প্রসেনজিৎ, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তা, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, কোয়েল মল্লিক প্রমুখ টালিউড তরকারা।

চিত্রজগত/সিনেমা

সংশ্লিষ্ট সংবাদ