শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বাংলাদেশের 'মুভি মোঘল' খ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব

এ কে এম জাহাঙ্গীর খান এর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক-প্রদর্শক এ কে এম জাহাঙ্গীর খান এর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। প্রয়াত জাহাঙ্গীর খান-এর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

এ কে এম জাহাঙ্গীর খান ১৯৩৯ সালের ২১ এপ্রিল, কুমিল্লার চিওড়া কাজী বাড়িতে (মামার বাড়িতে) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬০ ও ১৯৬২ সালে, জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রটি পরিবেশনার মাধ্যমে চলচ্চিত্র ব্যবসায় আগমন ঘটে এ কে এম জাহাঙ্গীর খান-এর। ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়ন মণি’ ছবিটি প্রযোজনার মাধ্যমে, চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তাঁর প্রযোজনা-পরিবেশনা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘আলমগীর পিকচারস্’।

জাহাঙ্গীর খান প্রযোজিত ও পরিবেশিত চলচ্চিত্রসমূহ– ‘বিজয়িনী সোনাভান’, ‘রূপের রাণী চোরের রাজা’, ‘রাজকন্যা’, ‘বাদল’, ‘কুদরত’, ‘আলতাবানু’, ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’, ‘এখানে আকাশ নীল’, ‘অপবাদ’, ‘নোলক’, ‘মা’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘আলিঙ্গন’, ‘কি যে করি’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘তুফান’, ‘রাজকন্যা’, ‘সওদাগর’, ‘রাজ সিংহাসন’, ‘তিন বাহাদুর’, ‘পদ্মাবতী’, ‘সম্রাট’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘ডাকু মর্জিনা’, ‘সোনাই বন্ধু’, ‘রঙিন রূপবান’, ‘রঙিন রাখালবন্ধু’, ‘শুভদা’, ‘রঙিন কাঞ্চনমালা’, ‘আলী বাবা চল্লিশ চোর’, ‘নাগজ্যোতি’, ‘সাগরকন্যা’, ‘শীষমহল’, ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, ‘বাবার আদেশ’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘আমার মা’, ‘রঙিন নয়নমণি’ প্রভৃতি।

এ কে এম জাহাঙ্গীর খান প্রযোজিত অনেক ছবিই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। পুরস্কৃত হয়েছেন অনেক শিল্পী-কলাকুশলীও। তাঁর যেসব ছবি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে তারমধ্যে- ‘নয়নমণি’ দুটি বিভাগে, ‘কি যে করি’ একটি বিভাগে, ‘সীমানা পেরিয়ে’ চারটি বিভাগে, ‘চন্দ্রনাথ’ চারটি বিভাগে ও ‘শুভদা’ তেরটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও তাঁর নির্মিত ছবি- বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার ও উত্তরণ চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে।

তিনিও অনেক সংগঠন কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। তাঁকে ‘নাট্যসভা’র চল্লিশ বছরপূর্তি উপলক্ষে সম্মাননা এবং ‘আবদুল জব্বার খান স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। সাংস্কৃতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা কালচারাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিসিআরইউ) তাঁকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দিয়েছে।

অসংখ্য ব্যবসাসফল জনপ্রিয় ছবি নির্মিত হয়েছে জাহাঙ্গীর খান-এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে। অনেক শিল্পী-কলাকুশলী প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁর নির্মিত ছবিতে কাজ করে। আমাদের চলচ্চিত্রে অনেকের সাফল্যের পিছনে ছিলেন জাহাঙ্গীর খান। একজন ভালো মানুষ হিসেবে চলচ্চিত্রের মানুষদের কাছে তিনি ছিলেন সমাদৃত। এক সময় ‘মুভি মোঘল’ হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন তিনি।

জাহাঙ্গীর খান ২০১৬ সালে তাঁর প্রযোজনা সংস্থা ‘আলমগীর পিকচার্সে’র ব্যানারে নির্মিত সব চলচ্চিত্রের প্রিন্ট, ফটোসেট, পোস্টার, স্থিরচিত্র ‘বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ’কে প্রদান করেন। তাঁর এই মহানুভবতা তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে জাহাঙ্গীর খান- চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

চিত্রজগত/চলচ্চিত্র

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়