বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

প্রথিতযশা সঙ্গীতশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রথিতযশা সঙ্গীতশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দ্রমোহন রাজবংশী’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

 

তিনি ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। প্রয়াণ দিবসে বাংলা লোকগানের এই মহান শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

 

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ১৯৪৬ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহ্যবাহী সংগীত পারিবারে জন্ম নেয়া লোকসংগীত এর জনপ্রিয় এই শিল্পী নানাধরণের গানের পাশাপাশি নিজেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

 

খ্যাতিমান এই কন্ঠশিল্পী আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে চাইলেও তাঁকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত তাঁর গাওয়া গান, যুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যুগিয়েছে। অংসখ্য দেশাত্ববোধক ও মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধকরণ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

 

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে প্রচুর গান গেয়েছেন। জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। তিনি আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন।

 

যেসব চলচ্চিত্রে তিনি গান গেয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য– চেনা অচেনা, তৃষ্ণা, গরমিল, সুজন সখি, নয়নমনি, আরাধনা, সারেং বউ, রাখে আল্লাহ মারে কে, গুনাই বিবি, মাটির কোলে, সন্ধি, শুভদা, জেলের মেয়ে রোশনি, নাগপঞ্চমী, অভাগী, দেবর ভাবী, পৃথিবী আমারে চায় না, প্রভৃতি।

 

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী’র গাওয়া কিছু কালজয়ী জনপ্রিয় গান– `সোহাগ চাঁদবদনি তুমি নাচো তো দেখি', `মায়ের চেয়ে বড় কেহ নাইরে দুনিয়ায়’, `কোকিলা কালো বলে গান শোনে না কে', `মাটির কোলে খাটি মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়রে’, মহররমের দশ তারিখে করলি কিরে রাব্বানা', যার নয়নে যারে লাগছেরে ভালো ভবে, যার নয়নে’, নদীর কুল নাই কিনার নাই রে', আমি না জানিলাম না চিনিলাম রে, তাঁরে কাছে পাইয়া দূরে রইলাম রে’, ঢেউ উঠছে সাগরে রে কেমনে পারি ধরি রে', হায়রে অবুঝ নদীর দুই কিনার’, কোন কিতাবে লেখা আছে গো হারাম বাজনা গান', ওরে মিছে রে তোর টাকাকড়ি মিছে বাহুবল, দিন থাকিতে করে নে তুই যা কিছু সম্বল', তুমি কোনবা দেশে রইলারে দয়াল চাঁন’, `আয় বাঙ্গালী মুক্তিসেনা বাংলার মান বাঁচাইরে’ ইত্যাদি।

 

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী গান গাওয়ার পাশাপাশি নিজে গান লিখেছেন এবং সুর করেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজ গান সংগ্রহ করতেন এবং গবেষণা করতেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এক হাজারেরও বেশি কবির লেখা বহু গান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। সংগীত কলেজে লোকসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। তিনি বাংলাদেশ লোকসংস্কৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা।

 

সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। দ্য এসোসিয়েশন অফ ওয়ার্ল্ড মাস্টার্স ফর দ্য এক্সচেঞ্জ অফ আর্টস এন্ড কালচার তাঁকে ‘সার্টিফিকেট অফ ওয়ার্ল্ড মাস্টার’ পদক প্রদান করে। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন দেশ ও বিদেশের অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা।

 

ব্যক্তিজীবনে ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, দীপ্তি রাজবংশীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দুই সন্তানের জনক; ছেলে দীপংকর রাজবংশী থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়, মেয়ে সংগীতা রাজবংশী থাকেন জাপানে।

 

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী তাঁর দরাজ কণ্ঠের জাদুতে জয় করেছেন বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষের অন্তর। তাঁর চমৎকার গায়কী ভংগী ও কন্ঠমাধুর্যে ছিলো ভিন্ন এক দ্যোতনা, যা মানুষের মনকে বিমোহিত করেছে-উদ্বেলিত করেছে। দেশব‌রেণ্য এই কন্ঠশিল্পী অনন্তলোকে চিরশান্তিতে থাকুন এই আামাদের প্রার্থণা।

 

চিত্রজগত/সঙ্গীত

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়