স্মরণ: চিত্রপরিচালক ও অভিনেতা অমল বোস-এর দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

জনপ্রিয় অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক অমল বোস-এর দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি, ৬৯ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। প্রয়াণ দিবসে অমল বোস-এর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।
গুণী অভিনেতা অমল বোস (অমলেন্দু বিশ্বাস) ১৯৪৩ সালের ১১ অক্টোবর, ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে, জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিজীবনে অভিনেতা অমল বোস, স্বাতী বোস-এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র মেয়ে, মন্দিরা বোস। তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয় মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। ১৯৬৩ সাল থেকে তিনি ক্লাব-থিয়েটারের মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক পরিচালনাও করতেন। তাঁর নির্দেশনায় নুরুল মোমেনের ‘আলো ছায়া’ নাটক তখন দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। সেই সময় তিনি, ‘অবসর’, ‘সপ্তরূপা’, ‘শৈবাল’ ও ‘রংধনু’ নাট্যগোষ্ঠীর হয়ে, অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন।
মঞ্চ নাটক
১৯৬০-এর দশকে অমল বোস তার অভিনয় জীবন শুরু করেন মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে। তিনি ১৯৬৩ সালে থেকে ঢাকা ক্লাব থিয়েটার-এ মঞ্চ নাটকে কাজ করেছেন। নুরুল মোমেনের নাটক আলো ছায়া তার নির্দেশনায় দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। সেই সময় তিনি অবসর, সপ্তরূপা, শৈবাল ও রংধনু নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন।
চলচ্চিত্র জগৎ
১৯৬৬ সালে রাজা সন্ন্যাসী ছবিতে অভিনয় করে চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেছিলেন। এরপর তিনি নীল আকাশের নিচে, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ-সহ বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি একটি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন অমল বোস। কেন এমন হয় নামের এই ছবিটি তিনি পরিচালনা করেন সত্তরের দশকে। ২০০৪ সালে মতিন রহমান পরিচালিত রং নাম্বার এবং মুশফিকুর রহমান গুলজারের কুসুম কুসুম প্রেম ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। অমল বোস ১৯৭৫ সালে ‘কেন এমন হয়’ নামে একটি ছবিও পরিচালনা করেছেন।
ছোট পর্দায়
প্রচুর টেলিভিশন নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন, জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সার্বজনীন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর প্রচারিত বিশেষ নাটিকায় ‘অসুর’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ‘জাতীয় মহিষাসুর’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর যাবত ঐ চরিত্রে অভিনয় করে গেছেন তিনি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর বিশেষ নাটিকায় ‘কংস’-এর চরিত্রেও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্ব্বী অভিনেতা।
সম্মাননা
অমল বোস তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে নব্বইয়ের দশকে পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম নির্মিত “আজকের প্রতিবাদ” ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
মৃত্যুবরণ
২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারিতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেই দিন সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, এবং তাকে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। পরবর্তীতে বেলা ১২টায় তার মেয়ের জামাই ইন্দ্রজিৎ সরকার হৃদরোগজনিত কারণে অমল বোসের মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করেন।
এছাড়াও, বিশিষ্ট পরিচালক ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত পরিচালিত জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি’র ‘নানা-নাতি’ পর্বে অমল বোসের নানা ও মোহাম্মদ শওকত আলী তালুকদারের নাতি চরিত্রটি বহুল আলোচিত হয়।
জনপ্রিয় অভিনেতা অমল বোস তাঁর অভিনয় নৈপূণ্যের জন্য পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম নির্মিত ‘আজকের প্রতিবাদ’ ছবিতে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। পেশাগত জীবনে জুট মিলস্ কর্পোরেশনের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৯৫ সালে চাকুরী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
এছাড়াও বিশিষ্ট উপস্থাপক-নির্মাতা হানিফ সংকেত-এর জনপ্রিয় টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র ‘নানা-নাতি’ পর্বে ‘নানা’ চরিত্রে তাঁর অভিনয় প্রতিভা তাঁকে জনপ্রিয়তার উচ্চশিখড়ে উপনীত করেছে।
একজন প্রতিভাবান মেধাবী অভিনেতা ছিলেন অমল বোস।অভিনয়ের সকল মাধ্যমেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র সব জায়গাতেই তিনি তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। একজন শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একজন গুণী অভিনেতা হিসেবে অমল বোস, চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
চিত্রজগত/স্মরণীয় বরণীয়