শক্তিমান অভিনেতা আবুল খায়ের এর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

জনপ্রিয় শক্তিমান অভিনেতা আবুল খায়ের এর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০১ সালের ২ ফেব্রুয়ারী, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। প্রয়াত এ গুণী অভিনেতা আবুল খায়েরের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
আবুল খায়ের (এ কে এম মহিবুর রহমান) ১৯২৯ সালের ৪ এপ্রিল, ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। বাংলাদেশের প্রথম সবাক পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ (১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তিপ্রাপ্ত) তিনি সর্বপ্রথম অভিনয় করেন।
জনপ্রিয় এই অভিনেতা আরো যেসব ছবিতে অভিনয় করেন সেগুলোরমধ্যে- কাঁচের দেয়াল, সংগম, সুতরাং, তিতাস একটি নদীর নাম, এখনই সময়, জন্ম থেকে জ্বলছি, লাল সবুজের পালা, পেনশন, সখিনার যুদ্ধ, সৎ ভাই, স্বাক্ষর, শত্রুতা, দহন, ন্যায়অন্যায়, পিতা-মাতা সন্তান, চন্ডীদাস ও রজকিনী, বন্ধু আমার, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, জামানা, ভাবীর সংসার, জিনের বাদশা, শত্রু, দুখাই, নদীর নাম মধুমতি, পদ্মা নদীর মাঝি, দীপু নাম্বার টু, শিমুল পারুল, আয়না বিবির পালা, হিংসা, সে (স্বল্পদৈর্ঘ্য), চাকা, একাত্তরের যীশু, অবুঝ সন্তান, অন্য জীবন, শ্রাবণ মেঘের দিন, ইতিহাস কন্যা প্রভৃতি।
অভিনয়ে সুনিপূণ দক্ষতার অধিকারী আবুল খায়ের চার চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা- দহন(১৯৮৫), শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা- রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত (১৯৮৭), শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা- অন্য জীবন (১৯৯৫) ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা- দুখাই(১৯৯৭)।
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী আবুল খায়ের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয় করে গেছেন দাপটের সাথে। বিশেষ করে টেলিভিশন নাটকে তাঁর বৈচিত্রময় অভিনয়শৈলী দারুনভাবে দাগ কেটেছে দর্শক-শ্রোতাদের মনে। এ মুহুর্তে মনে পরছে বিটিভির একটা জনসচেতনতামূলক নাটকের দৃশ্য- তিনি অর্জুন গাছ খুঁজে বেড়াচ্ছেন আর বলছেন “তাইলে আমি ওষুধ বানামু কি দিয়া, মানুষ বাঁচবো ক্যামনে, গাছ অইল অক্সিজেন ফ্যাক্টরি, আল্লাহর দেয়া দান, আমগো জীবন”। এই সংলাপটা সেসময়ে বেশ বিখ্যাত হয়েছিল। যা আজও স্মৃতিতে অম্লাণ হয়ে আছে শুধু তাঁর অভিনয় নৈপূণ্যের জন্য।
আবুল খায়ের অভিনীত টেলিভিশন নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সাম্প্রতিক, এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, নিমফুল, ব্যাধি, আজ রবিবার, পিতৃত্ব, দ্বিতীয় জন্ম, অয়োময়, প্রিয় পদরেখা, ইতিকথা, হিমু, সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড, নক্ষেত্রের রাত ইত্যাদি।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বেশকিছু প্রামাণ্যচিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তিনি কানাডার চলচ্চিত্র বোর্ডে যোগ দিয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন।
আবুল খায়ের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ভাষণ ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন। সে সময় তিনি সরকারের ফিল্ম ডিভিশন, ডিএফপি কর্মকর্তা। পাশাপাশি নিজ আগ্রহে হয়ে উঠেছিলেন ক্যামেরা বিশেষজ্ঞ। এর সংগে জড়িত ছিলেন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান এনএইচ খন্দকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর বক্তৃতার সময় এমএনএ আবুল খায়েরের তত্ত্বাবধানে টেকনিশিয়ান এনএইচ খন্দকার মঞ্চের নিচ থেকে ভাষণটির অডিও ধারণ করেন। আর আবুল খায়ের মঞ্চের এক পাশ থেকে ক্যামেরা নিয়ে ঐ ভাষণের চিত্রধারণ করেন।
দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি ছিলেন বিএফডিসি’র প্রথম এমডি। একবার বিদেশ সফরের সময় জাতির পিতা তাঁকে সফর সঙ্গী করেছিলেন। তবে, এই ইতিহাস দিয়ে তাঁকে চেনেন খুব কম মানুষ। চেনেন একজন অভিনেতা হিসেবে।
চলচ্চিত্র কংবা টেলিভিশন দুই মাধ্যমেই ছিলেন সমান জনপ্রিয়। বিশেষ করে, “সুখী নীলগঞ্জ” কথাটা বললেই এক লহমায় তাঁর মুখটি ভেসে ওঠে মনের মুকুরে। আবুল খায়ের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন চার বার। গুণী এই মানুষটি ২০০১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন। শ্রদ্ধা এই অমায়িক সজ্জন মানুষটির স্মৃতির প্রতি। মহান আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশত নসীব করেন।
ইতিহাসের কৃতি ব্যক্তিত্ব গুণী অভিনেতা-নির্মাতা আবুল খায়ের, চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন আমাদের মাঝে।
চিত্রজগত/চলচ্চিত্র