রবিবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বরেণ্য সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

আজ তাঁর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

গীতিকবি-সুরকার-সঙ্গীত পরিচালক-কন্ঠশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অসংখ্য জনপ্রিয় সুপারহিট গানের গীতিকবি ও সুরকার তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের এই প্রতিভাবান গুণি ব্যক্তিটির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের এই দিনে রাজধানীর আফতাবনগরে নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। মৃত্যুদিবস-এ প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

১৯৭০ দশকের শেষ লগ্ন থেকে অমৃত্যু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পসহ সঙ্গীত শিল্পে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি নিয়মিত গান করেন। ১৯৭৮ সালে মেঘ বিজলি বাদল ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গানের অ্যালবাম তৈরি করেছেন এবং অসংখ্য চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।

সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনক চাঁপা-সহ বাংলাদেশী প্রায় সকল জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কার-সহ অন্যান্য অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৫৬ সালে ১ জানুয়ারি, ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈতিৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার বেগমগন্জ থানার, আটিয়াকান্দী গ্রামে। তাঁর পিতার নাম ওয়াফিজ আহমেদ ও মাতার নাম ইফাদ আরা নাজিমুন নেসা। ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনে মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত অবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন তিনি।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭৬ সাল থেকে নিয়মিত গান-বাজনা শুরু করেন। তাঁর সংগীত পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নাগরদোলা’ ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায়।

অসংখ্য জনপ্রিয় গানে সুর করেছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, যার অধিকাংশ গানই নিজের লেখা। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জনপ্রিয় গানের মধ্যে- ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে, ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে মেঠো পথটার পারে দাঁড়িয়ে’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’, ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনে ছিলাম গান’, ‘আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি’, ‘আমার মন কান্দে, ও আমার প্রাণ কান্দে’, ‘আইল দারুণ ফাগুন রে’, ‘আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকব’, ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয় হাজার বছর আগেও বুঝি ছিল পরিচয়’, ‘বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম’, ‘আম্মাজান আম্মাজান’, ‘এই বুকে বইছে যমুনা’, ‘পৃথিবীর জন্ম যেদিন থেকে তোমার আমার প্রেম সেদিন থেকে’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘তোমার আমার প্রেম এক জনমের নয়’, ‘আমার হৃদয় একটা আয়না’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা হৃদয়ে সুখের দোলা’, ‘তুমি আমার এমনই একজন যারে এক জনমে ভালবেসে ভরবে না এ মন’, ‘একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল’, ‘বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয় এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়’, ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’, ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙা হাতে’, অন্যতম।

এই সঙ্গীতজ্ঞ তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার: শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক- ২০০১ (প্রেমের তাজমহল), শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক- ২০০৫ (হাজার বছর ধরে)। বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার: সেরা গীতিকার- ১৯৮৪ (নয়নের আলো), সেরা গীতিকার- ১৯৯৯ (আম্মাজান), সেরা গীতিকার- ২০০১ (আব্বাজান), সেরা গীতিকার- ২০০২ (ইতিহাস), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস – সেরা সঙ্গীত পরিচালক (২০০৪)। এছাড়া
সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক-২০১০ প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশের সেরা সংগীত পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম একজন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। বলা যায় সবচেয়ে জনপ্রিয় সুরকার ও সংগীত পরিচালক তিনি। তাঁর সুরের মূর্ছনায় এই দেশের আপামর শ্রোতাদের বিমোহিত করেছেন, উদ্বেলিত করেছেন, যুগের পর যুগ ধরে। তাঁর লেখা/সুর করা দেশাত্মবোধক, আধুনিক এবং চলচ্চিত্রের গান ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় ও সমাদৃত হয়েছে সর্বস্তরে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে তাঁর অবস্থান জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

বাংলা গানে, শ্রুতিমধুর সুরের যাদুকর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, বড় অসময়ে চলে গেছেন অনন্তলোকে। রেখে গেছেন তাঁর লেখা ও সুর করা কালোত্তীর্ণ সব গান। সেসব গানের মাধ্যমে, লাখো-কোটি ভক্তের হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।

চিত্রজগত/সঙ্গীত

সংশ্লিষ্ট সংবাদ