উপমহাদেশের প্রথম টেলিভিশন সঙ্গীত শিল্পী
ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন আজ

উপমহাদেশের (ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মিয়ানমার) প্রথম টেলিভিশন সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌসি রহমান-এর জন্মদিন আজ। ১৯৪১ সালের ২৮ জুন তিনি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে জন্মগ্রহন করেন। চিত্রজগত পরিবারের পক্ষ থেকে শিল্পীর জন্য রইলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
এই শুভদিনকে ঘিরে বিশেষ কোনো আয়োজন করছেন না বলে জানান গুণী এই শিল্পী। তিনি বলেন, মন ভালো নেই, একের পর এক প্রিয়জন হারানোর খবর পাচ্ছি। যাদের সঙ্গে অনেক দিনের পথচলা তাদের অনেকেই আজ নেই। দুই ছেলে রুবাইয়াত ও রাজিন এখন আছেন দেশের বাইরে। তাই জন্মদিন নিয়ে আলাদা করে ভাবার অবকাশ নেই।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে আজ কঠিন সময়, দেশের মানুষও ভালো নেই। শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামান স্যার, কামাল লোহানী, মোস্তফা কামাল সৈয়দসহ আরও গুণী মানুষকে হারিয়েছি করানোর এই মহামারিতে। তাই বিশেষ এই দিনটিতে আমার প্রার্থনা, সৃষ্টিকর্তা যেন এই বিশ্ব পরিস্থিতি যেন খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক করে দেন। আবার যেন আমরা হাসি-আনন্দের জোয়ারে ভাসতে পারি।
করোনা এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন ফেরদৌসী রহমান। অনেক দিন ধরে বাসার বাইরেও জান না তিনি। তবে অবসর সময় কাজে লাগাতে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। সংগীত ভুবনে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া এবং ব্যক্তি জীবনে নানা অভিজ্ঞতার সবার কাছে তুলে ধরতে আত্মজীবনী লিখছেন বলেও জানান তিনি।
প্রায় ছয় দশকের গানের ক্যারিয়ারে জনপ্রিয় এই গায়িকা ফোক, আধুনিক, উচ্চাঙ্গসংগীত, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, প্লেব্যাক সব ধরনের গানেই কণ্ঠ দিয়েছেন।
ফেরদৌসী রহমানের পিতা পল্লীগীতি সম্রাট আব্বাস উদ্দিন। তার কাছেই গানের হাতেখড়ি এই তারকার। বাবা ছাড়াও ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান প্রমূখ সঙ্গীতজ্ঞের কাছে তালিম নিয়েছেন তিনি।
খুব অল্প বয়স থেকে তার মঞ্চে গাওয়া শুরু হয়। মাত্র ৮ বছর বয়সে রেডিওতে ‘খেলাঘর’ নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাছাড়া ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান করেন। আর বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘এসো গান শিখি’ দিয়ে সবার কাছে ‘খালামনি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন ফেরদৌসী রহমান।
১৯৬০ সালে ফেরদৌসী রহমান ইউনেস্কো ফেলোশীপ পেয়ে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ অব মিউজিক থেকে ৬ মাসের সঙ্গীতের ওপর স্টাফ নোটেশন কোর্স সম্পন্ন করেন। ৩টি লং প্লেসহ প্রায় ৫০০টি ডিস্ক রেকর্ড এবং দেড় ডজনের বেশি গানের ক্যাসেট বের হয়েছে তার।
গানের জগতে সফল এই গায়িকা ১৯৬৬ সালের ২৬শ অক্টোবর মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের রুবাইয়াত ও রাজিন নামে দুই ছেলে আছে।
ফেরদৌসী রহমান নজরুল ইন্সটিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। সঙ্গীত ভুবনে অবদান রাখার জন্য তিনি জাতীয় পর্যায়ে নানাভাবে সন্মানিত হয়েছেন।
তার অর্জিত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে আছে
লাহোর চলচ্চিত্র সাংবাদিক পুরস্কার (১৯৬৩ সাল), প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরম্যান্স পুরস্কার (১৯৬৫ সাল), টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৫), জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (১৯৭৭), বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি বাচসাস পুরস্কার (১৯৭৬), একুশে পদক (১৯৭৭ সাল)। এছাড়াও তিনি নাসিরউদ্দিন গোল্ড মেডেল পুরস্কার, মাহবুবুল্লাহ গোল্ড মেডেল পুরস্কার লাভ করেন।
চিত্রজগত/সঙ্গীত