‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’ পাচ্ছেন ছটকু আহমেদ এবং ইমরুল শাহেদ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও প্রথম চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক এবং বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ এর পরিচালক ফজলুল হক। ২৬ অক্টোবর ফজলুল হক-এর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছরই এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হয়। এবছর পুরস্কার পাচ্ছেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় ছটকু আহমেদ এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় ইমরুল শাহেদ।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। ফজলুল হকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি’ ২০০৪ সাল থেকে এই দিনে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’ দিয়ে আসছে। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন এ, পুরস্কার প্রবর্তন করেন।
পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি এবারের অনুষ্ঠানে ফজলুল হকের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘অগ্রপথিক ফজলুল হক’ দেখানো হবে। এ তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন শহিদুল আলম সাচ্চু।
ষাটের দশকের শুরুতে ফজলুল হক ‘প্রেসিডেন্ট’ নামে একটি শিশুতোষ সিনেমা তৈরি করেছিলেন যা পাকিস্তান আমলে পুরস্কৃতও হয়েছিল। ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিতে শিশুনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন আজকের স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর। ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিটি যখন নির্মিত হয় তখন ঢাকায় প্রযোজিত সিনেমার সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। পরে তিনি ‘উত্তরণ’ নামে আরো একটি সিনেমা পরিচালনা করেন। পত্রিকা সম্পাদনা বা চলচ্চিত্র পরিচালনা কোনোটাতেই তিনি থেমে থাকেননি। পরে অন্যান্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র নির্মাণের একেবারে সূচনা পর্বে ফজলুল হকের অবদান স্মরণীয়। তাঁর অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি’ প্রতি বছর একজন চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও সেরা চলচ্চিত্রের পরিচালককে পুরস্কৃত করে আসছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন চলচ্চিত্রের এই গুণী মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে তাদের একটি মূল মিলনায়তনের নামকরণ করেছে ‘ফজলুল হক স্মৃতি মিলনায়তন’। চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ফজলুল হক ইন্সটিটিউট অব মিডিয়া স্টাডিজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩০ সালের ২৬ মে বগুড়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ১৯৯০ সালের ২৬ অক্টোবর ফজলুল হক মৃত্যুবরণ করেন। ফজলুল হক ছিলেন এ দেশের প্রথম সিনেমা বিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক ও প্রকাশক। পঞ্চাশের দশকে এদেশে সিনেমা শিল্পের যাত্রা শুরুর আগেরই সিনে সাংবাদিকতা বা চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ রীতিমতো দুঃসাহসিক কাজ ছিল। এখনকার চলচ্চিত্রশিল্প বা অসংখ্য পত্র-পত্রিকার যুগে সেই সময়ের এই উদ্যোগ সম্পর্কে কল্পনাও করা কষ্টকর ছিল। ফজলুল হক সেই অসাধ্য কাজটি করেছিলেন। সেই দিন থেকে ফজলুল হককে এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বলা হয়। ১৯৫০ সালে বগুড়া থেকে সিনেমা পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকাশনা ঢাকায় স্থানান্তর হয়। পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো ২, এসি রায় রোড ঢাকা থেকে। পত্রিকাটির সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ১৯৫৯ সালে। তৎকালীন সময়ের অত্যন্ত মানসম্পন্ন ও জনপ্রিয় পত্রিকা ছিল ‘সিনেমা’ পত্রিকা।
ইতিমধ্যে ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার’ পেয়েছেন: সাইদুল আনাম টুটুল এবং ফজল শাহাবুদ্দিন (২০০৪), চাষী নজরুল ইসলাম ও আহমদ জামান চৌধুরী (২০০৫), হুমায়ূন আহমেদ ও রফিকুজ্জামান (২০০৬), সুভাষ দত্ত ও হীরেন দে (২০০৭), গোলাম রাব্বানী বিপ্লব ও আবদুর রহমান (২০০৮), আমজাদ হোসেন ও সৈয়দ শামসুল হক (২০০৯), মোরশেদুল ইসলাম ও চিন্ময় মুৎসুদ্দী (২০১০), ই আর খান ও অনুপম হায়াৎ (২০১১), নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ও গোলাম সারোয়ার (২০১২), রাজ্জাক ও রেজানুর রহমান (২০১৩), সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী ও আরেফিন বাদল (২০১৪), মাসুদ পারভেজ ও শহীদুল হক খান (২০১৫), আজিজুর রহমান ও মোস্তফা জব্বার (২০১৬), আবদুল লতিফ বাচ্চু ও নরেশ ভুঁইয়া (২০১৭), মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও শফিউজ্জামান খান লোদী (২০১৮), কোহিনূর আখতার সুচন্দা ও রাফি হোসেন (২০১৯), আলমগীর ও শামীম আলম দীপেন (২০২০) এবং কাজী হায়াত ও মাজহারুল ইসলাম (২০২১)। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ও আবদুল্লাহ জেয়াদ (২০২২)।
উলেখ্য, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন তার সহধর্মিণী। জ্যেষ্ঠপুত্র ফরিদুর রেজা সাগর বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা প্রবাল বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী স্থপতি, বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী বিশিষ্ট রন্ধনবিদ ও ছোট মেয়ে ফারহানা মাহমুদ কাকলী একজন সুগৃহিনী।
চিত্রজগত ডটকম/ভিন্ন খবর