বৃহস্পতিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

তরুণ নির্মাতা মনির হোসেন জীবন’র জন্মদিন আজ

ছোট পর্দার জনপ্রিয় তরুন নির্মাতা মনির হোসেন জীবন’র জন্মদিন আজ।
১৯৬৮ইং সালের ১৫ ফেব্রোয়ারী নরসিংদী জেলার, মনোহরদী থানাধীন কুতুবদী (বড় বাড়ী) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ডা. এম এ আজিজ অব. পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের সার্বিসেস দল পুলিশের হয়ে ফুটবল খেলতেন।

বাবার হাত ধরেই মনির হোসেন জীবন আশির দশকে নরসিংদী জেলাতে এবং সার্ভিসেস দল বাংলাদেশ আনসার দলের মাঠ মাতানো খেলোয়ার ছিলেন। পাশা-পাশি বিনোদন চর্চা করতেন স্থানীয় ভাবে ঊদিচী শিল্পী গোষ্ঠির মাধ্যমে। পরবর্তীতে ঢাকাতে বাংলাদেশ থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চ নাটকে জড়িত হন।

‘স্বাধীন থিয়েটার’ নামে এই নির্মাতার একটি মঞ্চ নাটকের দল রয়েছে। তাঁর নির্দেশনায় মঞ্চে ও বেশ কিছু মঞ্চ নাটক প্রদর্শিত হয়েছে এবং হচ্ছে।

মনির হোসেন জীবন ১৯৯০ইং সাল থেকে তাঁর চাচা চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকনের হাত ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তৎকালীন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক- এম এম সরকারের সাথে ‘আত্মবিশ্বাস’, ‘অবলম্বন’, ‘অগ্নি স্বাক্ষর’, ‘অজানা শত্রু’। সুভাস সোম এর সাথে ‘বরখেলাপ’। কামারুজ্জামানের সাথে ‘পাপী শত্রু’। আওকাত হোসেনের সাথে ‘জানের বাজী’। জিল্লুর রহমানের সাথে ‘স্ত্রীর অধিকার’ এবং ‘সত্যের সংগ্রাম’। হুমায়ুন আহমেদের সাথে ‘আগুনের পরশমণি’ এছাড়াও দিলীপ দের মত গুণি পরিচালকদের সাথে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন ১০/১২টি চলচ্চিত্রে। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে প্যাকেজ ফোরাম আন্দোলনের সাথে জড়িত হন।

চলচ্চিত্র ও টিভি অভিনেত্রী প্রযোজক শবনম পারভীনের মাধ্যমে খ্যাতিমান চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন ভুলুর শীষ্য হিসেবে টিভি মিডিয়াতে প্যাকেজ নাটকের একেবারে শুরুতে কাজ শুরু করেন এবং এক এক করে খ্যাতিমান নাট্য পরিচালক পরিচালক মামুনুর রশিদের সাথে বিটিভির প্রথম প্যাকেজ ধারাবাহিক নাটক ‘শিল্পী’ আহমেদ ইউসুফ সাবেরের সাথে ‘যখন যেখানে যার এবং ‘ইতি তোমার আমি’ বরকত উল্লাহর সাথে ‘বৃষ্টির অপেক্ষায়’, নওয়াজেশ আলী খানের সাথে ‘ভাল বীজে ভাল ফসল’, ‘মোহন খানের সাথে ‘গাংচিলের পালক’ এবং ‘গাংচিলের ভালবাসা’, মুনির হাসান চৌধুরী তারার সাথে ‘ধুসর বসন্ত’ এবং হুমায়ুন আহমেদের সাথে ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা’, ‘দ্বিতীয়জন’, ‘ছুরি’সহ বেশ কিছু নাটক, বিজ্ঞাপন চিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্রতে প্রধান সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন।
বিটিভির প্রথম প্যাকেজ ধারাবাহিক নাটক মামুনুর রশিদের শিল্পী’ এবং হুমায়ুন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকের প্রধান সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন তিনি। তাঁর কাজের এবং মেধার দক্ষতা দেখে মরহুম হুমায়ুন আহমেদ তাঁকে ‘নুহাশ চলচ্চিত্রের’ প্রধান সহকারী পরিচালক হিসাবে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ দেন।

তাছাড়াও হুমায়ুন আহমেদের গ্রন্থনায় মনির হোসেন জীবনের পরিচালনায় বিটিভিতে প্রচারিত হয় বিখ্যাত গানের ধারাবাহিক অনুষ্ঠান ‘জলসা ঘর’, বলা যেতে পারে এই ‘জলসা ঘর অনুষ্ঠান থেকেই বাংলাদেশে ‘মিউজিক ভিডিও’ নির্মাণ প্রচলন শুরু হয়। সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘তুই যদি আমার হইতি’, ‘আমি হইতাম তোর’, ‘সেলিম চৌধুরীর গাওয়া ‘আইজ পাশা খেলবোরে শ্যাম’, সুবির নন্দীর গাওয়া ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’, ‘মরিলে কান্দিসনা আমার দায়’, বারী সিদ্দিকীর গাওয়া বিখ্যাত গান ‘আমার গাঁয়ে যত দুঃখ সয়’, ‘পুবালী বাতাসে’, ‘শুয়া চান পাখী’, ‘তুহিনের গাওয়া বিখ্যাত গান’ ‘গাঁয়ের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’, দিলরুবা খানের গাওয়া ‘আমি কুলহারা কলংকিনি’, বেবী নাজনীনের গাওয়া ‘সখি কুনজু সাজাও গো’, ‘আজ আমার প্রাণনাথ আসিতে পারে’, ফিরোজা বেগমের কন্ঠে ‘বিয়ার সাজন সাজ তাড়াতাড়ি’, তৎকালীন মডার্ণ গানের জন্য বিখ্যাত ‘বগুড়া ইয়ুথ কয়ারে’র টিপুর কণ্ঠে বেশ কিছু গান সহ অসংখ্য গান রেকর্ডিং করে এবং মিউজিক ভিডিও করে এই ‘জলসা ঘর’ অনুষ্ঠানে প্রচার করা হত আসাদুজ্জামান নূর এবং সারা যাকেরের উপস্থাপনায়।

মরমী গীতিকার হাসন রাজা, রাধা রমন, দীন ভবানন্দ, উকিল মুন্সি, সৈয়দ শাহনুর, গিয়াস উদ্দীন এবং শাহ আব্দুল করিমের মত বিখ্যাত মরমী গীতিকারদের গান প্রচার করা হত সেই ‘জলসা ঘর’ অনুষ্ঠানে। এখানে উল্লেখ্য শাহ আব্দুল করিমকে সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে সংগীত শিল্পী সেলিম চৌধুরী এবং তুহিন মাধ্যমে খুঁজে বের করেন, ঢাকায় এনে ‘জলসা ঘর’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে শাহ আব্দুল করিম ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। এছাড়াও হুমায়ুন আহমেদের প্রচুর জনপ্রিয় নাটক পরিচালনার সাথে জড়িত মনির হোসেন জীবন।

২০০০ সাল থেকে মনির হোসেন জীবন তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র’ গঠন করেন। তাঁর প্রযোজনা সংস্থা থেকে তিনি অসংখ্য একক নাটক নির্মাণ করেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘শাদা কাগজ’, ‘বন্যার চোখে জল’, ‘অপ্রত্যাশিত প্রত্যাশা’, ‘অতঃপর নিঃস্বঙ্গতা’, ‘একজন ময়না’, ‘গানম্যান’, ‘বিবাহ সংকট’, ‘কোরবান আলীর কোরবানী’ সহ প্রায় শতাধিক নাটক নির্মাণ করেছেন।

আলোচিত টেলিফিল্মের মধ্যে ‘কালা গলার মালা’, ‘ঢুলি বাড়ী’, ‘হতাই’, ‘ফজর আলী’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘তুচ্ছ’, ‘কথা আছে’, ‘বংশ প্রদীপ’, ‘অহম’, ‘বাঙ্গালির বিয়ে’, ‘নিজের সংগে দেখা’, ‘তুমি এলে তাই’, ‘ফোর ষ্টুপিড’ সহ প্রচুর টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন মনির হোসেন জীবন।

আলোচিত ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে ‘চোর কাঁটা’, ‘আলী বাবা চল্লিশ স্মাগলার’, ‘অভিমানী’, ‘ফৈজু কবিরাজ’, ‘সেই করেছো ভাল’, ‘নীল ছায়া’, ‘খন্ডচিত্র’, ‘গুজব’, ‘ভবের মানুষ’, ‘ফটিক চোর না সবাই’।
এছাড়া ‘গুনীন’, ‘আগন্তুক’, ‘থানার নাম শনির আখড়া’ সহ অসংখ্য ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি।

শর্ট ফিল্ম ‘বাঁচার জন্য’, ‘গম্ভীরা’, ‘আর্সেনিক’, ‘দ্যা রিপোর্টার’, ‘লেডি মাস্তান’, ‘সেনিটারি লেট্রিন ছাড়া কোন গতি নাই’, ‘শিক্ষার আলো’ সহ বেশকিছু শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেন।

এছাড়াও অসংখ্য প্রামান্যচিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘প্রাথমিক ও গনশিক্ষা’, ‘ক্ষুদ্ররিন’, ‘ওয়াটার চুল্লি’, ‘এক চাবিতে তিন দরজা’, ‘বিষের নাম আর্সেনিক’, ‘সেনিটারী লেট্রিন’, ‘ঢাকা ওয়াশা’, ‘মধুমতি মডেল টাউন’, ‘মশা’, ‘পুলিশ ডকুমেন্টরী’, ‘বিবিএস কেবলস’, ‘নাহি এসএস পাইপ’, ‘নাহি জিও টেক্সটাইল’, ‘ডায়নামিক কার’ সহ অসংখ্য এভি নির্মাণ করেছেন।

আর দর্শক নন্দিত বিভিন্ন কোম্পানীর প্রচুর বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ করেছেন যা অনেক আলোচিত হয়েছে।
মিডিয়াতে ৩০ বছর ধরে তিনি অত্যন্ত সুনাম এবং দক্ষতার সহিত কাজ করে চলেছেন।

মনির হোসেন জীবন তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রচুর সম্মাননা পেয়েছেন। এরমধ্যে ব্যাষ্ট চ্যাপ এ্যাওয়ার্ড নরসিংদী জেলা ২০০০ইং, বাচসাস এ্যাওয়ার্ড ২০০১, ওস্তাদ আমিরুল ইসলাম এ্যাওয়ার্ড ২০০১, ফুলকলি এ্যাওয়ার্ড ২০০২, অক্টো সামাদ এ্যাওয়ার্ড ২০০২, ঝিলিক চ্যানেল আই এ্যাওয়ার্ড ২০০৩, যাদুগর সামাদ স্মৃতি এ্যাওয়ার্ড ২০০৩, বাচসাস এ্যাওয়ার্ড ২০০৪, ডিসিআর এ্যাওয়ার্ড ২০০৪, ওস্তাদ আমিরুল ইসলাম এ্যাওয়ার্ড ২০০৪, ষ্টার এ্যাওয়ার্ড ২০০৪, বাবিসাস এ্যাওয়ার্ড ২০০৪, ট্র্যাব এ্যাওয়ার্ড ২০০৫, স্বাধীনতা পদক ২০০৬, ঢাকা কালচারাল রিপোটার্স ইউনিটি এ্যাওয়ার্ড ২০০৭, নিলীমা (বিশ্ব ভালবাসা দিবস) এ্যাওয়ার্ড ২০০৮, বাংলাদেশ অষ্ট্রেলিয়া মাল্টিকালচার এ্যাওয়ার্ড ২০০৯, বাবিসাস এ্যাওয়ার্ড ২০০৯, এটিএন বাংলা বিনোদন ধারা এ্যাওয়ার্ড ২০১০, ওস্তাদ শেখ ওয়াহিদ এ্যাওয়ার্ড ২০১১, জিটিসি টার্ম এ্যাওয়ার্ড ২০১১, বিনোদন ধারা পারফরমেন্স এ্যাওয়ার্ড ২০১২, এটিএন বাংলা বিনোদন ধারা এ্যাওয়ার্ড ২০১২, ট্র্যাব এ্যাওয়ার্ড ২০১৩, এটিএন বাংলা পারফরমেন্স এ্যাওয়ার্ড ২০১৩, বিনোদন ধারা পারফরমেন্স এ্যাওয়ার্ড ২০১৪, বাচসাস এ্যাওয়ার্ড ২০১৪, বাবিসাস এ্যাওয়ার্ড ২০১৫, এটিএন বাংলা বিনোদন ধারা এ্যাওয়ার্ড ২০১৫, বাবিসাস এ্যাওয়ার্ড ২০১৬, বিনোদন ধারা এ্যাওয়ার্ড ২০১৬, মাওলানা ভাসানী পদক ২০১৭, বাবিসাস এ্যাওয়ার্ড ২০১৭, স্বাধীনতা পদক ২০১৮ ও ডিসিআরইউ এ্যাওয়ার্ড ২০১৮।

চিত্রজগত/বিনোদন

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

এই সপ্তাহের পাঠকপ্রিয়