জেমসের কনসার্টে হট্টগোল, টিকিট কেটেও ঢুকতে না পারার অভিযোগ

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইটিসি ইভেন্টস লিমিটেড ও উইজার্ডের আয়োজনে ‘দ্য স্কুল অব রক ভলিউম ১’। লাইনআপে ছিল নগরবাউল জেমস, ওয়ারফেজ, অ্যাভয়েড রাফা, সোনার বাংলা সার্কাস, কার্নিভাল, আফটারম্যাথসহ আরও কয়েকটি নতুন ব্যান্ড। মার্কিন নির্মাতা রিচার্ড লিঙ্কলেটারের ‘স্কুল অব রক’ সিনেমার মতোই দুর্দান্ত ছিল সব কিছু। তবে দর্শকের পক্ষ থেকে ওঠা বেশ কিছু অভিযোগ ম্লান করে দিল এই ‘দুর্দান্ত’ শব্দটি!
দর্শকেরা বলছেন, ভেন্যুতে ছিল নজিরবিহীন অব্যবস্থাপনা। প্রবেশমুখে ছিল না কোনো নির্দেশনা বুথ, যে কারণে টিকিট কেটেও ভেন্যুতে প্রবেশ করতে পারেননি অনেকে। ভেন্যু গেটে শিল্পীদের জন্য ছিল না বিশেষ কোনো অভ্যর্থনার ব্যবস্থা, এমনকি অডিটোরিয়ামের ভেতরেও যথেষ্ট বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকার কথা জানিয়েছেন অনেক দর্শক। এমন নানা অব্যবস্থাপনায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইটিসি ইভেন্টসের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দর্শকেরা।
আয়োজকেরা জানিয়েছিলেন, দুদিন আগেই কনসার্টের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তরুণ ব্যান্ড-পাগল শ্রোতাদের জন্য কনসার্টটিতে থাকবে বেশ কিছু সারপ্রাইজ। কিন্তু শুক্রবার বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের ভেন্যুতে প্রবেশ করতে গিয়ে বিস্মিত ও হতাশ হয়েছেন আগত দর্শকেরা।
টিকিট কেটে এক নজর জেমসকে দেখবেন বলে দিনাজপুর থেকে কনসার্টে এসেছিল এক ভক্ত। তিনি এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ওই ভক্ত বলেন, ‘আমি ভেতরে প্রবেশ করার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড় ও ধাক্কাধাক্কির কারণে ব্যর্থ হয়েছি।’
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ থেকে কনসার্ট দেখতে এসে ফিরে যাওয়া মেসবাহ নামের এক তরুণ গণমাধ্যমকে বললেন, ‘সোনার বাংলা সার্কাসের ভক্ত আমি, নারায়ণগঞ্জ থেকে কনসার্টে এসেছি। জীবনে অনেক কনসার্টে গিয়েছি, কিন্তু এত অব্যবস্থাপনার সম্মুখীন আগে হইনি। ১০০০ টাকার টিকিট কেটে কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা করেও ভেন্যুতে ঢুকতে পারিনি।’
এত বড় কনসার্টে এমন অব্যবস্থাপনা, এই প্রসঙ্গে ব্যান্ড ওয়ারফেজের ভোকালিস্ট পলাশ নূরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বললেন, ‘রক কনসার্ট নিঃসন্দেহে বড় একটা ব্যাপার। আমাদের ব্যান্ড মিউজিকের গৌরবান্বিত ইতিহাস আছে। তাই কোনো কনসার্ট হলে, উপচেপড়া ভীড় হবে এটাই স্বাভাবিক। গতকাল দ্য স্কুল অব রকের লাইনআপ খুবই হেভিওয়েট ছিল। জেমস ভাই ছিলেন, ওয়ারফেজ, অ্যাভয়েড রাফাসহ আরও অনেক ব্যান্ড ছিল। সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয় ‘অন স্পট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি’র বিষয়টা সবচেয়ে বেশি জরুরি। যাঁরা টিকিট কিনে কনসার্টে এসেছে, তাঁদেরকেই ভেন্যুতে ঢোকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। কিন্তু যখন হট্টোগোল হয় তখন ক্ষতিটা হয় যাঁরা টিকিট কেটে এসেছিল তাঁদের। তাই যেখানেই কোনো কনসার্ট হোক না কেন, ‘অন স্পট ম্যানেজমেন্ট’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, নয়তো পরে আর সেই ভেন্যুতে ওরা টিকিট কেটে কনসার্ট দেখতে আসবে না।’
এই ভোকালিস্ট আরও বলেন, ‘আগে যেমন সিডি বা অ্যালবাম বের হতো, এখন তো তেমনটা নেই। তাই আমরা শিল্পীদের একমাত্র আয়ের জোগাড় এই কনসার্টের মাধ্যমেই করতে হয়। মানুষ এখন টিকিট কেটে কনসার্টে আসছে—এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। এখন যাঁরা টিকিট কেটে আসছেন তাঁদের আরও উৎসাহিত করতে হবে। তাঁদেরকে নিরাপত্তা ও প্রাপ্ত মর্যাদা নিশ্চিত করেই এটা সম্ভব।’
অব্যবস্থাপনার অভিযোগের তির উঠেছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইটিসি ইভেন্টস ও উইজার্ডের বিরুদ্ধে। তবে ইটিসি ইভেন্টস লিমিটেডের আয়োজক কমিটির প্রধান মারুফা ইয়াসমিনের মন্তব্য জানতে একাধিকবার কল ও মেসেজ পাঠালেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।
দেশে বর্তমানে সবচেয়ে সুন্দর ও গোছানো কনসার্ট ভেন্যু হিসেবে সমাদৃত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার কনসার্ট হল। ব্যান্ড ওয়ারফেজের ৩০তম বর্ষপূর্তির কনসার্টের মাধ্যমে এই ভেন্যুর যাত্রা শুরু হয়। ব্যান্ড ওয়ারফেজের দলনেতা ও ড্রামার শেখ মনিরুল আলম টিপু বললেন, ‘ওয়ারফেজের ৩০ বর্ষপূর্তির কনসার্টে দেড় মাইল পর্যন্ত লম্বা লাইন চলে গিয়েছিল, একটা কোনো গণ্ডগোল হয়নি। এগুলো ম্যানেজমেন্টের বিষয়। এটা যেহেতু বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের ভেন্যু, তাই তাঁদেরকেও এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে যাঁরা ইভেন্ট করবে তাঁদেরকেও এসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। মূল কথা, এই ব্যাপারগুলোতে সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে।’
খ্যাতনামা ‘ফিডব্যাক’ ব্যান্ডের মাকসুদুল হক বললেন, ‘অপেশাদার লোকজন যদি কনসার্ট করতে চায়, তাহলে তো এমন হবেই। তাই যাঁদের কনসার্ট আয়োজনে সঠিক ব্যবস্থাপনা করার সামর্থ্য বা যোগ্যতা আছে, সেই বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষকে অনুমতি দেওয়া উচিৎ।’
এখন পর্যন্ত বেশ কিছু আলোচিত কনসার্ট হয়েছে আইসিসিবি ভেন্যুতে—এই কথা উল্লেখ করে এই সংগীতশিল্পী আরও বললেন, ‘শুক্রবার যা হয়েছে সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বটে। তবে এমনটাও হওয়া উচিৎ ছিল না।’
চিত্রজগত ডটকম/