রবিবার, ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

বরেণ্য গীতিকার, কবি, কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

কে জি মোস্তফা আর নেই

‘তোমারে লেগেছে এতোযে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে,’আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন, কপোলে কালো টিপ পরবে তখন’সহ এমন অনেক শ্রোতা নন্দিত ও জনপ্রিয় গানের গীতিকার, কবি, কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক কে. জি. মোস্তফা আর নেই! আজ রবিবার (৮ মে) রাত ৮টার দিকে তিনি তার নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য কে জি মোস্তফা গীতিকার হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন সফল সাংবাদিক, কথা সাহিত্যিক, কবি এবং কলামিস্টও বটে।

আগামীকাল সোমবার (৯ মে) বাদ জোহর জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

জন্ম ১ জুলাই ১৯৩৭ সালে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায়। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। দৈনিক ইত্তেহাদে ১৯৫৮ সালে শিক্ষানবিশ হিসেবে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। ওই বছরই ‘দৈনিক মজলুম’-এ সহ-সম্পাদক পদে নিয়োগ পান এবং পত্রিকাটির বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত বহাল ছিলেন। এরপর দীর্ঘ বিরতি।

১৯৬৮ সালে সাপ্তাহিক জনতায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭০ সালে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা কফিলউদ্দীন চৌধুরীর প্রেস সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। ওই সময় পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক প্রথম শ্রেণীর রেডিও সার্ভিসের জন্য মনোনীত হন। মুক্তিযুদ্ধের কারণে চাকরিতে যোগদান থেকে বিরত থাকেন। স্বাধীনতার পর কে জি মোস্তফা প্রথমে ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’, পরে ‘দৈনিক স্বদেশ’ পত্রিকায় চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ‘দৈনিক জনপদে’ কূটনৈতিক রিপোর্টার ছিলেন। ওই সময় ‘নূপুর’ নামে একটি বিনোদন মাসিকও সম্পাদনা করতেন।

১৯৭৬ সালে বিলুপ্ত সংবাদপত্রের একজন সাংবাদিক হিসেবে কে জি মোস্তফা বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারভুক্ত হন এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে প্রথমে সম্পাদক, পরে সিনিয়র সম্পাদক পদে উন্নীত হন। অবসর নেন ১৯৯৬ সালে।

চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর থেকে প্রকাশিত কিশোর পত্রিকা ‘নবারুণ’, সাহিত্য মাসিক ‘পূর্বাচল’, ‘সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সংবাদ’ এবং সর্বশেষ ‘সচিত্র বাংলাদেশ’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দক্ষতা ও কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় কিছুকাল তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের মুখপত্র ‘অগ্রদূত’-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন।

ছাত্রজীবন থেকে কে জি মোস্তফার কবিতা দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়ে আসছে। ১৯৬০ সাল থেকে চলচ্চিত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনে তাঁর লেখা প্রচুর গান প্রচারিত হয়। হাজার গানের গীতিকার কে জি মোস্তফার লেখা সিনেমার গানগুলো খুবই জনপ্রিয়। তাঁর গানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী তালাত মাহমুদ এবং বাংলাদেশের খ্যাতিমান প্রায় সব শিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন।

এক সময় তিনি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনার দিকে ঝুঁকেছিলেন। ‘মায়ার সংসার’, ‘অধিকার’ ও ‘গলি থেকে রাজপথ’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।

কবি ও গীতিকার কে জি মোস্তফার সৃজনশীলতা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্র- পত্রিকায় প্রকাশিত সুধীজনদের প্রাণবন্ত আলোচনা সম্প্রতি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছে জ্যোতি প্রকাশন ‘একজন কে জি মোস্তফা’ শিরোনামে।

তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলী হচ্ছে :
কাব্যগ্রন্থ : কাছে থাকো ছুঁয়ে থাকো, উড়ন্ত রুমাল, চক্ষুহীন প্রজাপতি, সাতনরী প্রাণ, আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন, এক মুঠো ভালোবাসা, প্রেম শোনে না মানা।

গদ্যগ্রন্থ : কোথায় চলেছি আমি (সরস আত্মকাহিনী)

ছড়ার বই : শিশু তুমি যিশু, কন্যা তুমি অনন্যা, মজার ছড়া শিশুর পড়া।

গানের সিডি ও ক্যাসেট : তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, তৃষ্ণা আমার হারিয়ে গেছে,
কাছে থাকো ছুঁয়ে থাকো।

প্রাপ্ত সম্মাননা ও পদক :
কুমিল্লা অলক্ত সাহিত্য সংসদ— সংবর্ধনা ও পদক-১৯৮৭,
জাতীয় প্রেস ক্লাব—লেখক সম্মাননা ও পদক-২০০৩/২০০৯,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ললিতকলা বিভাগ ‘সফেন’-এর সম্মাননা ও পদক ২০০৪,
‘সৃজনী’ সংগীত গোষ্ঠীর সম্মাননা ও পদক-২০০৫,
বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ লেখক পুরস্কার-২০১০,
বাংলাদেশ স্কাউটস-এর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক-১৯৯২,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডাকসু’র শ্রেষ্ঠ কবির সনদপত্র-১৯৫৯।

তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাব সদস্য কবিদের মাসিকপত্র ‘কবিতাপত্র’ সম্পাদনা করেছেন, ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘সাহিত্য বাংলাদেশ’ সম্পাদনা, পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা।

চিত্রজগত/স্মরণীয় বরণীয়

সংশ্লিষ্ট সংবাদ